হলুদ পোড়া গল্পের বড়ো প্রশ্ন
১। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্প অবলম্বনে ধীরেন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
Ans: 'হলুদ পোড়া' গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুধু নয়, বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী। এই গল্পের পুরুষ চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম চরিত্রটি হল ধীরেন। গল্পটির মধ্যে তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল-
যুক্তিবাদী মনোভাব : প্রথম পরিচয়ে দেখা যায়, ধীরেন শিক্ষিত ও যুক্তিবাদী। নবীনের স্ত্রী দামিনীর হঠাৎ অসুস্থতায় ধীরেনকে ডেকে পাঠানো হলে, সে চিন্তিত মুখে নবীনকে জানায় শা’পুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার। গ্রামবাসী কুঞ্জ ওঝার গুণপনায় বিভ্রান্ত হলে যুক্তিবাদী মন নিয়ে সে সংস্কারের বিরোধিতা করে। শুভ্রার মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শোনা গেলেও সে তার যুক্তির দ্বারা সব সমাধান করতে চায়।
সমাজসংস্কারক: সমাজে থাকতে গেলে শিক্ষিত মানুষের উচিত সমাজসংস্কারে উদ্যোগী হওয়া। শিক্ষিত ধীরেন সে উদ্দেশ্যে প্রথম দিকে প্রবল উৎসাহের সঙ্গে সাতচল্লিশখানা বই নিয়ে লাইব্রেরি, সাতজন ছেলেকে নিয়ে তরুণ সমিতি, বই পড়ে পড়ে সাধারণ রোগের বিনামূল্যে ডাক্তারি- ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সমর্পণ করেছিল।
সত্যবাদী: ধীরেন সত্যবাদীও বটে। পুথিগত শিক্ষা তাকে মানুষ ঠকাতে বাধা দেয়। তাই দামিনীর অসুস্থতায় তাকে ডাকা হলে সে অকপটে স্বীকার করে- ‘আমি তো পাশ করা ডাক্তার নই, দায়িত্ব নিতে ভরসা হচ্ছে না।’
জনসেবা: গ্রামের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষকে উন্নত চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ধীরেন সাধারণ রোগে বিনামূল্যে ওষধ বিতরণ করতেন। পরিবার বৃদ্ধিতে তার সংসার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও সে চার আনা আট আনা ফি নিয়ে এখনও যে ডাক্তারি করে, ওষুধ বিক্রি করে।
কর্তব্যপরায়ণতা: ধীরেন কর্তব্যনিষ্ঠ। অন্তঃসত্ত্বা বোন শুভ্রার প্রতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সে মানবিকতা হেতু তালগাছের টুকরো দিয়ে বাড়ির পিছনের ডোবাতে ঘাট বানিয়ে দিয়েছিল, যাতে শুভ্রা উঠতে নামতে গিয়ে পিছলে না পড়ে যায়।
এইভাবে ধীরেন চরিত্রটি সমগ্র 'হলুদ পোড়া' গল্পে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে কাহিনিটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
২। শান্তি চরিত্রটির পরিচয় দাও।
Ans: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হলুদ পোড়া' গল্পটিতে শান্তি চরিত্রটির প্রথম আবির্ভাব ঘটেছে একজন গেঁয়ো মেয়ে হিসেবে। ধীরেনের সঙ্গে বিয়ের দুই বছরের মধ্যে শান্তি চারটি ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছে। শান্তি চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হল-
পতিব্রতা: ধীরেনের মতো একজন শিক্ষিত, যুক্তিবাদী না হলেও কীতার স্ত্রী শান্তি স্বামীর আদেশ সর্বদা মেনে চলার চেষ্টা করে। শুভ্রাকে নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে নানারকম কুরুচিকর আলোচনা শুরু হলে শান্তি তার স্বামী ধীরেনের নির্দেশমতো শুভ্রাকে নিয়ে কোনে মন্তব্য করেনি।
সাংসারিক: সংসারের মঙ্গল, অর্থাৎ স্বামী ও সন্তানের কল্যাণ কামনায় শান্তি সর্বদা তৎপর। শুভ্রার অশরীরী আত্মার থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য শান্তি ক্ষেন্তি পিসির পরামর্শে একটা কাঁচাে বাঁশের দুই মাথা পুড়িয়ে বাড়ি ও ডোবার ঘাটের মাঝে রেখে দিয়েছে।
ঘরকন্না: পারিপার্শ্বিক ভীতির পরিবেশের মধ্যে বসবাস করেও শান্তি নিয়মিত ঘরকন্নার কাজ করেছে। সন্ধ্যার আগেই সে রান্না ও ঘরকন্নার কাজ সমাপ্ত করেছে। দিনের আলো ডোবার আগে শান্তি ছেলেমেয়েদের খাবার খেতে দেয়। সন্ধ্যাদীপ জ্বেলে নিজের খাওয়া সমাপ্ত করে ধীরেনের খাবার বেড়ে ঢাকা দিয়ে রাখে, অর্থাৎ - ঘরকন্নার কাজে সে কোনোরূপ শৈথিল্য দেখায়নি।
বাস্তববোধ: শাস্ত্রমতে রাত্রে আমিষ খাবারের আয়োজনে নানা অপদেবতা আকৃষ্ট হয়। শান্তি এই কারণে অশরীরী আত্মার থেকে মুক্ত থাকার অভিপ্রায়ে বিকালে মাছ রান্না করে না। আবার রাত্রের রান্নার পর কাপড় ছেড়ে তারপর ঘরে প্রবেশ করে।
-এইভাবে শান্তি 'হলুদ পোড়া' গল্পটিতে নিজের নানা বৈশিষ্ট্য প্রদান করে উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে।
৩। চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চারিদিকে হইচই পড়ে যাওয়ার কারণ গল্প অনুসরণে লেখো।
Ans: Download App to see answer
৪। “শা পুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার।” – কৈলাস ডাক্তারকে ডাকার প্রয়োজন পড়েছিল কেন?
Ans: Download App to see answer
১১। "...গাঁ-সুদ্ধ লোক যেন অপ্রস্তুত হয়ে রইল।" গ্রামের লোকদের এই অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ কি ছিল আলোচনা করো।
Ans: বাংলা সাহিত্যের বিংশ শতাব্দীর কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'হলুদ পোড়া' গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
গ্রামের লোকদের অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ : এই গল্পে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিনের ব্যবধানে গ্রামে দুটি খুন হয়। প্রথমে মধ্যবয়সী বলাই চক্রবর্তীর মৃতদেহ পাওয়া যায় গ্রামের দক্ষিণে ঘোষদের মজা পুকুরের পাশে এক মরা গজারি গাছের নিচে। লাঠির আঘাতে তার মাথা চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় খুন ছিল ষোলো-সতেরো বছরের রোগা ভীরু মেয়ে শুভ্রার। সন্ধ্যার সময় বাড়ির পিছনের ডোবার ঘাটে গলা টিপে মেরে কেউ তার দেহ ফেলে রেখে যায়। বলাই চক্রবর্তীর মৃত্যু গ্রামবাসীর কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না, বরং অনেকেই তা চেয়েছিল। তবে শুভ্রার মৃত্যু নিয়ে হইচই কম হলেও গ্রামবাসীর কৌতূহল ও বিস্ময় ছিল অনেক। ঘরের সাধারণ মেয়ে শুভ্রা সবার চোখের সামনেই বড় হয়েছে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল, আর মাসখানেক আগে সন্তান জন্ম দিতে বাবার বাড়িতে এসেছিল। এমন একটি ঘরের সাধারণ মেয়ের এই পরিণতি গ্রামবাসীর কাছে ভাবনাতীত ছিল। তার মতো মেয়ের জীবনে এমন কিছু লুকানো থাকতে পারে, যা এত ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে, তা পাশের বাড়ির মেয়েও ভাবতে পারেনি। সেই কারণেই শুভ্রার মৃত্যুর ঘটনায় পুরো গ্রাম অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল।
১২। “আমি বলাই চক্রবর্তী। শুভ্রাকে আমি খুন করেছি।” বক্তা ধীরেনের এই স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে তার জীবনের কোন্ সত্যটিকে লেখক তুলে ধরেছেন ?
Ans: Download App to see answer
১৩। "দাওয়াটি যেন স্টেজ”-কোন্ 'দাওয়া'? সেখানে কোন্ ম্যাজিক আমদানি করা হয়েছিল?
Ans: Download App to see answer
১৪। "আমায় মেরো না।”-এই আর্তি কার? তার এরূপ আর্তির কারণ আলোচনা করো। ২+৩
Comments
Post a Comment